প্রকাশিত: ১৭/০৩/২০১৭ ১১:৫৮ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
আজ ১৭ মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস।

১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিনের সেই শিশুটিই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালীর মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে কালক্রমে হয়ে ওঠেন বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা, বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে।

আজীবন সংগ্রামী এই মহান নেতার যখন জন্ম হয় তখন এ উপমহাদেশে ছিল ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। ছোটবেলা থেকেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। আর এ কারণেই কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে তিনি প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর বিপ্লবী জীবন। ম্যাট্রিক (এখন এসএসসি) পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এ সময়েই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সান্নিধ্য লাভ করেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর এক মুহূর্ত তিনি থেমে থাকেননি। পশ্চিম পাকিস্তানীদের নির্যাতনের খড়গ রুখতে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ। এরপর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলীম লীগ থেকে মুসলীম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়।

তখনকার তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন নামকরণে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আঁতকে ওঠে। এর পর থেকে কখনও ভাষার জন্য, কখনও স্বাধিকারের জন্য চলতে থাকে আন্দোলন। এসবের আড়ালে গড়ে ওঠে স্বাধীনতার আন্দোলন। ১৯৪৭ এর দেশবিভাগ ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালীর অবিসাংবাদিত নেতায় পরিণত হন। আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নাম তাই চিরভাস্বর হয়ে আছে। বাংলা, বাঙালী ও বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক কালজয়ী অধ্যায়। এই দেশ ও এই ভূখণ্ড যতদিন থাকবে, পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় যতদিন স্রোতধারা বহমান থাকবে, বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হবে এর সর্বত্রই, সবখানে।

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান চিত্রায়িত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর কারণেই। বিশ্বসভায় বাঙালী জাতির সগর্ব উপস্থিতিই স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে। এ অবিভাজ্য অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি নেই। তাই তো কবি লিখেছেন : যতদিন রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ৬ দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় বাঙালী জাতি। এতে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী বাঙালীর এই নির্বাচনে বিজয়কে মেনে নেয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে তারা নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এ অবস্থায় ১৯৭১-এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন : এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালী জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন বঙ্গবন্ধু। এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালী ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এর কিছু দিনের মধ্যেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট কালো রাতে ঘাতকদের বুলেটে সপরিবার নিহত হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই বাঙালী।

পাঠকের মতামত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আজ

‘ঈদ এসেছে দুনিয়াতে শিরনি বেহেশতী/দুষমনে আজ গলায় গলায় পাতালো ভাই দোস্তি’- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ...